GOLD ট্রেডিং এর করণীয় – স্পট ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করার জন্য, আমাদের অনেকের কাছেই জনপ্রিয় একটি ট্রেডিং এসেট হচ্ছে GOLD. তবে আপনার জ্ঞানের জন্য বলছি, এই গোল্ড কিন্তু কারেন্সি মার্কেটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। যদিও আমরা ফরেক্স মার্কেটে, একই সাথে বিভিন্ন কারেন্সি পেয়ারের সাথে gold ট্রেডিং করার সুবিধা পাই, তারপরও এটি কারেন্সি মার্কেটের অন্তর্ভুক্ত নয়।
গোল্ড হচ্ছে মুলত, Commodity Market এর অন্তর্ভুক্ত যেখানে আরও রয়েছে OIL, Silver এর মতন ট্রেডিং এসেটগুলো।
কমোডিটি ট্রেডিং এসেটগুলোর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে GOLD এবং OIL (জ্বালানী তেল)। আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা মুলত GOLD ট্রেডিং এর জন্য করণীয় কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। এতে করে আপনি যদি নিয়মিত গোল্ডে ট্রেড করতে পছন্দ করেন তাহলে এই গাইডলাইনটি আপনার জন্য বিশেষ সহায়িকা হিসাবে কাজ করবে।
আর্টিকেলটি কিছুটা বড় আকারের হবে তাই আপনার সুবিধার জন্য, আলোচ্য বিষয়গুলোকে নিচের বক্সে উপস্থাপন করছি। তবে আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, অবশ্যই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময় নিয়ে বুঝে পড়বেন। এতে করে আপনি নতুন করে বেশকিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
GOLD এর জন্য ভিন্ন কৌশল
আপনি হয়তোবা চিন্তা করছেন, বিভিন্ন কারেন্সি পেয়ারে আমরা যেই কৌশল ব্যবহার করে ট্রেড করি, গোল্ডের ক্ষেত্রেও আমরা একই ধরনের কৌশল ব্যবহার করে ট্রেড করবো। এতে ভিন্ন কিছুই নেই।
দুঃখিত, আপনার চিন্তার সাথে আমরা কোনভাবেই একমত পারছি না। যদিও কারেন্সি ট্রেডিং করার জন্য আমরা যেসকল ট্রেডিং টুল ব্যবহার করি, যেমন ইন্ডিকেটর, চার্ট প্যাটার্ন, ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন ইত্যাদি, সেগুলো গোল্ডে ট্রেড করার জন্যও ব্যবহার করা হয়ে থাকে তবে, গোল্ডের প্রাইস মুভমেন্টের পিছনে আরও বেশ কিছু কারন থাকে যেগুলো টেকনিক্যাল টুল ব্যবহার করে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। সুতরাং, গোল্ডে ট্রেড করার জন্য অবশ্যই স্পেশাল কিছু বিষয় আপনাকে মনে রাখতে হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন? সহজেই উত্তর প্রদানের চেষ্টা করছি। অনুগ্রহ করে নিচের বিষয়টি ভালো করে বোঝার চেষ্টা করুন।
সাধারণ কারেন্সি পেয়ারে ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে মুলত দুইটি ভিন্ন ভিন্ন কারেন্সি একসাথে যুক্ত থাকে। যেখানে একটি কারেন্সির বিপরীতে আমরা অন্য কারেন্সির ভ্যালুকে কম কিংবা বেশী হিসাবে ধরে নিয়ে আমরা পজিশন হিসাবে BUY/SELL করে থাকি।
কিন্তু গোল্ড ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
একটি কারেন্সি পেয়ারে যেহেতু দুইটি দেশের কারেন্সি বিদ্যমান থাকে অর্থাৎ, দুই দেশের অর্থনীতিও জড়িত থাকে। এক্ষেত্রে আমরা দুইটি দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে বুঝতে পারি এবং সেগুলোর পার্থক্য খুঁজে বের করতে পারি। কিন্তু গোল্ড, একক কোনও দেশের নয়। কোনও দেশের মুদ্রাও নয়! তাহলে গোল্ডের অ্যানালাইসিস আমরা কিভাবে করবো?
বিষয়টি সম্পর্কে কিছুটা পরে আলোচনা করছি। তবে এতটুকু মনে রাখবেন, গোল্ড যেহেতু কোনও দেশের একক কারেন্সি নয়, কোনও দেশের রাষ্ট্রীয় মুদ্রাও নয়, তাহলে এর নিয়ন্ত্রণ কে করে? যেমন, টাকার (BDT) মান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রয়েছে আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বাংলাদেশ ব্যাংক), Dollar এর মান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম (FED)।
গোল্ডের মান, দাম কিংবা মুল্য নির্ধারিত হয় মুলত স্পট মার্কেটে গোল্ডের চাহিদা এবং যোগানের পরিমানের উপর ভিত্তি করে।
এই কারনে, গোল্ড অ্যানালাইসিস এবং ট্রেডিং পদ্ধতি, সাধারন কারেন্সির তুলনায় কিছুটা জটিল এবং ভিন্ন। চিন্তা করার কিছুই নেই, বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে আপনি বুঝতে পারবেন। তবে সেটি শুরু করার পূর্বে, গোল্ডের কিছুটা ইতিহাস সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক।
GOLD পরিচিতি
GOLD কিংবা XAU/USD এই দুইটি একই অর্থ প্রকাশ করে। ব্রোকারভেধে ট্রেড করার জন্য আপনি ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে GOLD কিংবা XAU/USD দেখতে পাবেন। যেটিতে আপনি চাইলে এন্ট্রি গ্রহন করতে পারেন।
আর্টিকেলটি শুরু করার সময় বলেছিলাম, গোল্ড হচ্ছে আন্তর্জাতিক লেনদেন করার একটি বিনিময় ব্যবস্থা। তবে সেটি এখন আর কার্যকর নেই। আমরা সবাই, বৈদেশিক লেনদেন করার জন্য এখন মার্কিন ডলার (USD) ব্যবহার করে থাকি। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, ১৯৭১ সালের পূর্ব পর্যন্ত ডলারের মুল্য কেমন হবে, সেটি নির্ধারণ করার একটি মাত্র উপায় ছিল GOLD. যেটি Bretton Woods Agreement নামে পরিচিত ছিল।
২য় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত বড় বড় বৈদেশিক লেনদেন সংঘঠিথ হত, মুলত এই গোল্ডের বিবেচনায়। এই কারনে, তখন পৃথিবীর রিজার্ভ হিসাবে গোল্ডকে গন্য করা হত। তবে চাহিদার তুলনায় যোগানের অপ্রতুলতা, বিনিময় করার জন্য বহনে সমস্যা এবং বিভিন্ন কাঠামোগত পরিবর্তন (যেমন, জুয়েলারি) এর মাধ্যমে গোল্ডের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে, গোল্ডের উপর থেকে বিভিন্ন দেশ নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে থাকে।
যেমন ধরুন, দেশের আমদানি ব্যায় পরিশোধ করার জন্য, বাংলাদেশকে প্রতি মাসে প্রায় ৪-৫ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ খরচ করতে হয়। এখন যদি এই পরিমাণ অর্থ গোল্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়, তাহলে কি পরিমাণ গোল্ডের প্রয়োজন হবে, সেটি কি বুঝতে পারছেন?
শুধু তাই নয়, এখন যেখানে কয়েকটি মাউসের ক্লিকের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে, কয়েকটি বাটন ব্যবহার করেই যেকোনো এমাউন্টের মুদ্রা অন্যত্র ট্র্যান্সফার করা সম্ভব কিন্তু গোল্ড ব্যবহার করে কি সেটি করা যাবে? উত্তরটি আপনার জন্য রেখে দিলাম! নিচের কমেন্ট বক্সে আমাদের জানাতে পারেন।
এরকম বিভিন্ন কারনে, বৈদেশিক লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে গোল্ডের ব্যবহার সীমিত করা হয় এবং সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মার্কিন ডলার, সেই জায়গা দখল করে নেয়। অর্থাৎ, এখন “মার্কিন ডলার হচ্ছে পৃথিবীর রিজার্ভ কারেন্সি” এই স্টেটমেন্টটির পূর্বের স্টেটমেন্ট ছিল, “GOLD হচ্ছে পৃথিবীর রিজার্ভ কারেন্সি”।
লেনদেন হিসাবে গোল্ডের প্রয়োজন ফুরিয়ে আসলেও রিজার্ভ হিসাবে কিন্তু এখনও গোল্ডের গুরুত্ত কমেনি। আপনি কি জানেন, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ব্যাংক রিজার্ভ হিসাবে মার্কিন ডলারের সাথে এখনও গোল্ড রিজার্ভ করে রাখে!
কি পরিমাণ রিজার্ভ রয়েছে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছে, সেটির পরিমাণ শুনলে, মাথা খারাপ হয়ে যেতে পারে।
রিজার্ভ হিসাবে GOLD
পৃথিবীর শুরু থেকেই গোল্ড, মুল্যবান একটি ধাতু হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে এবং সেটি চলমান থাকবে। কেননা এটিই একমাত্র ধাতু যেটির চাহিদা কোনওদিনই হ্রাস পাবেনা। এই কারনে “খনিজ” হিসাবে গোল্ডের মুল্য সর্বদাই সবথেকে বেশী।
আপনার মনে হতে পারে, আমরা ভুল-ভাল বলছি! গোল্ড যদি এতবেশী মুল্যবান হয় তাহলে, হীরা (Diamond) কি দোষ করেছে? হীরা মুল্যবান কিন্তু সেটি গোল্ডের তুলনায় কম। আপনি কি কখনোও শুনেছেন, কোনও দেশ নিজেদের রিজার্ভ হিসাবে হীরা ব্যবহার করছে? কিংবা কখনও শুনেছেন, হীরার দাম অর্থাৎ, মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে?
এমনকি বিদ্যমান মাহামারি এবং যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও হীরার মুল্য বৃদ্ধি পায়নি। অন্যদিকে, গোল্ডের মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। যাই হোক এই তর্কে আমরা যাচ্ছি না। নিচের চার্টে আমরা দেখানোর চেষ্টা করেছি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ রিজার্ভ হিসাবে কি পরিমাণ গোল্ড বর্তমানে নিজেদের কাছে মজুদ করে রেখেছে।
এটি Statista ওয়েবসাইট থেকে গৃহীত, ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের গোল্ড এর রিজার্ভের তথ্য।
উপরের চিত্র দেখে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, শক্তিধর দেশগুলো কি পরিমাণে গোল্ড মজুদ করে রেখেছে। বলা হয় থাকে, এখন পর্যন্ত যেই পরিমাণ গোল্ড খনি থেকে উত্তোলিত হয়েছে সেটির ৪ ভাগের ৩ ভাগ পরিমাণ গোল্ড মজুদ রয়েছে, পৃথিবীর ১০ টি শক্তিধর দেশের কাছে।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, রিজার্ভ হিসাবে যদি সবাই মার্কিন ডলার মজুদ করে রাখে, তাহলে গোল্ডের মজুদ করার প্রয়োজনীয়তা কেন?
ধরুন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র” ভিন্ন কোনও দেশের সাথে যুদ্ধে জড়াল। উধাহরন হিসাবে ধরে নিলাম “রাশিয়া”। তাহলে এখন যুদ্ধে কারনে এই দুইটি দেশের অর্থনীতিই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ফলাফল হিসাবে দুই দেশের মুদ্রা মানই অস্বাভাবিক ভাবে কমে আসবে।
এখন যেসকল দেশ, রিজার্ভ হিসাবে মার্কিন ডলার মজুদ করে রেখছে, ডলারের ভ্যালু কিংবা মান কমে আসার কারনে, তাদের রিজার্ভের মানও অনেকাংশেই কমে আসবে। তাহলে এখন দেশগুলো যুদ্ধের জন্য সৃষ্ট এই আপদকালিন সংকট কিভাবে মোকাবেলা করবে?
উত্তর দিতে পারবেন?
উত্তর হচ্ছে, গোল্ড! গোল্ডের ভ্যালুর উপর এই ধরনের কোনও প্রভাব পরে না এবং সকল দেশেই গোল্ডের ভ্যালু, একই থাকে। দেশগুলো তখন নিজেদের রিজার্ভ থেকে গোল্ড ব্যবহার করে বৈদেশিক লেনদেন করতে থাকবে। কেননা ডলারের ভ্যালু কমে আসলেও, গোল্ডের ভ্যালু কিন্তু কমে নি।
আশা করছি, এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন, কেন এখনও শক্তিধর দেশগুলো মার্কিন ডলারের সাথে সাথে গোল্ডও রিজার্ভ করে রাখে।
গোল্ডে ট্রেডিং সুবিধা
বেশকিছু কারনে, ট্রেডারদের কাছে গোল্ডের ট্রেডিং অনেকবেশী জনপ্রিয়। এমনকি আমাদের কাছেও কারেন্সি পেয়ারে ট্রেডিং এর থেকে, গোল্ড ট্রেডিং এর গুরুত্ত কিছুটা হলেও বেশী। প্রশ্ন হচ্ছে কেন? চলুন উত্তর খোজার চেষ্টা করা যাক।
স্থিতিশীল মুভমেন্ট – গোল্ডের যেই ধরনের মুভমেন্ট হয় সেটি সম্পূর্ণরূপেই স্বাভাবিক। কারেন্সি পেয়ারের মতন অস্বাভাবিক কোনও মুভমেন্ট Gold ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে দেখতে পাবেন না। এছাড়াও, গোল্ড যদি এমন কোনও মুভমেন্ট করেও থাকে, তাহলেও সেটির পিছনের কারন, সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। এই কারনে, ট্রেডাররা গোল্ডের প্রতি বেশী আকৃষ্ট থাকেন।
কম স্প্রেড – কারেন্সি পেয়ারের তুলনায়, গোল্ড ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে স্প্রেডের পরিমাণ থাকে অনেক কম এবং এটির স্প্রেড তেমন পরিবর্তিত হয়না। আপনি দেখতে পাবেন, বিভিন্ন ধরনের নিউজ প্রকাশের সময় কিংবা যখন মার্কেটে লিকুইডিটির পরিমাণ কম থাকে, তখন স্প্রেডের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পায়। তবে গোল্ড ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি একদমই নেই।
ট্রেন্ডি এসেট – যেহেতু গোল্ড পৃথিবীর রিজার্ভ হিসাবেও বিবেচিত হয় এবং একক কোনও দেশের কাছে এর নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই গোল্ডের মুভমেন্ট সর্বদাই নির্দিষ্ট ট্রেন্ডের মধ্যে বিদ্যমান থাকে।
লংটার্ম প্রফিট মেশিন – আপনি যদি গোল্ডকে লংটার্ম ট্রেডিং এর জন্য ব্যবহার করেন, তাহলে সেটি কি ধরনের প্রফিট প্রদান করবে (অবশ্যই এন্ট্রি যদি ভালো হয়) সেটি আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না। সাধারন কারেন্সি পেয়ারের মুভমেন্ট থেকেও গোল্ডের প্রফিটের পরিমাণ অনেক বেশী। তবে অবশ্যই সেটিকে লংটার্ম হিসাবে বিবেচনা করতে হবে।
ফান্ডামেন্টাল বিষয়গুলো খুব কাজ করে – গোল্ডের মুভমেন্ট মুলত হয়, বৈশ্বিক বিভিন্ন অবস্থার ভিত্তিতে। একক কোনও দেশের অর্থনীতির অবস্থার কারনে গোল্ডের মুভমেন্টের তারতম্য হয়না। যেমন ধরুন, প্রেসিডেন্ট হিসাবে বাইডেন কি সিধান্ত গ্রহন করবেন, সেটির প্রভাব পড়বে USD এর উপর এবং সকল USD কারেন্সি পেয়ারে। কিন্তু গোল্ড এই দিকে অনেক “safe”. মুলত বিশ্ব যখন নির্দিষ্ট কোনও সমস্যার মধ্যে পতিত হয় তখন গোল্ডের উপরে ব্যাপক প্রভাব পরে। যেমন ধরুন, বৈশ্বিক মন্দা, যুদ্ধ পরিস্থিতি, বৈশ্বিক মাহামারি জনিত বিষয়গুলো সর্বদাই গোল্ডের মুভমেন্ট করার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসাবে ভালো কাজ করে।
GOLD ট্রেডিং এর করণীয়
আপনি যদি ট্রেড করার জন্য গোল্ড নির্বাচন করেন তাহলে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছি। এই পরামর্শগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই পরামর্শগুলোকে আমরা দুইটি ভাগে বিভক্ত করেছি। একটি হচ্ছে ফান্ডমেন্টাল বিষয় এবং অন্যটি হচ্ছে সেন্টিমেন্টাল বিষয়।
ফান্ডামেন্টাল বিষয়াদি
জ্ঞান:নতুনদের জন্য গোল্ডের ট্রেডিং অনেকবেশী ঝুঁকিপূর্ণ। আপনি যদি নতুন অবস্থায় ট্রেডিং শুরু করে থাকেন কিংবা রিয়েল ট্রেডিং এর অভিজ্ঞতা খুব বেশীদিনের না হয়, তাহলে GOLD ট্রেডিং থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। “অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী” সেই হিসাবে আপনার জ্ঞানের পরিমাণ যদি কম থাকে তাহলে গোল্ড, আপনার ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে নিয়ে আসতে পারে।
এই জন্য আপনি যদি রিয়েল ট্রেডার হয়েও থাকেন, তারপরও গোল্ডে ট্রেড করার জন্য কমপক্ষে ৫ মাস অতিরিক্ত প্র্যাকটিস করবেন, শুধুমাত্র গোল্ডের জন্য। আর জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য আমাদের অনলাইন ট্রেনিং সেকশন ত আছেই।
স্কাল্পিং:স্কাল্পিং কিংবা সহজ কথায়, ছোট সময়ের ট্রেড গোল্ডের জন্য নয়। যারা মুলত ছোট সময়ের জন্য ট্রেড করে প্রফিট করেন, তাদের জন্য গোল্ড ট্রেডিং কাজ করবে না। কেননা গোল্ডের ট্রেড বড় সময়ের অর্থাৎ, দীর্ঘ সময়ের ট্রেডিং এসেট। এটিতে স্কাল্পিং ট্রেড করার বৃথা চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকবেন। হয়তোবা আপনি স্কাল্পিং করার মাধ্যমে প্রফিট পাবেন, তবে সেটি সবসময়ই যে প্রফিটের মধ্যেই থাকবে সেটির কোনও নিশ্চায়তা একদমই নেই।
লিভারেজ:অতিরিক্ত লিভারেজ, গোল্ডের ট্রেডিং এর জন্য খুবই খারাপ। যারা মুলত বেশী লিভারেজ নিয়ে ট্রেড করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য গোল্ড ট্রেডিং নয়। গোল্ড ট্রেডিং এর জন্য আমাদের পরামর্শ হবে, যত কম পরিমাণ পারেন, লিভারেজ গ্রহন করবেন। 1:200 এর উপরে লিভারেজ গ্রহন করে গোল্ড ট্রেডিং করবেন না।
শুধুই গোল্ড:যেই ট্রেডিং অ্যাকাউন্টে আপনি গোল্ড ট্রেড করবেন, চেষ্টা করবেন সেই ট্রেডিং অ্যাকাউন্টে অন্য কোনও কিছু ট্রেড না করতে। যদি আপনি, কারেন্সি ট্রেডিং করতে আগ্রহী থাকেন তাহলে কষ্টকরে নতুন একটি ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করে সেটিতে গোল্ড ট্রেড করতে পারেন। গোল্ডের এন্ট্রির সাথে ভিন্ন কোনও কারেন্সির এন্ট্রি গ্রহন করবেন না।
রিস্ক ম্যানেজ:ট্রেডিং জন্য আপনি যেই ধরনের এসেট পছন্দ করেন, সেটির জন্য রিস্ক ম্যানেজমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রিস্ক ম্যানেজমেন্ট একটি সেন্টিমেন্টাল বিষয় যেটি মুলত ট্রেডাররা নিজ ট্রেডিং প্যাটার্ন অনুসারে সেট করে থাকেন। অর্থাৎ, এটির নির্দিষ্ট কোনও সুত্র কিংবা স্ট্যান্ডার্ড কিংবা কোনও প্যাটার্ন নেই। যে যার ইচ্ছা মতন বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ভালো মানের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কৌশল ছাড়া গোল্ডে ট্রেড করতে যাবেন না। রিস্ক ম্যানেজ করার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন Risk Management ট্রেনিং কোর্স থেকে।
ব্রোকার নির্বাচন:GOLD ট্রেডিং এর জন্য, ভালোমানের ব্রোকার নির্বাচন, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা ব্রোকার যদি আপনাকে ভালো ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম প্রদান না করে, তাহলে আপনি যতই ভালো ট্রেড করেন না কেন, প্রফিট করা আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। ব্রোকার নির্বাচন এমনিতেই কিছূটা কষ্টকর বিষয়। যেসকল ব্রোকারে, গোল্ডের স্প্রেড কম, লিভারেজের পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকে, অতিরিক্ত কমিশন এবং চার্জ নেই, এন্ট্রির কোনও এক্সপাইরেশন সময় নেই এবং রেগুলেটেড ব্রোকারে ট্রেড করার জন্য। ব্রোকার সম্পর্কে জানার জন্য, ওয়েবসাইটের ব্রোকার সেকশনটিতে দেখে নিতে পারেন।
এতক্ষন আমরা ফান্ডমেন্টাল কিছু বিষয় সম্পর্কে জানলাম। এখন, GOLD ট্রেডিং এর করণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে টেকনিক্যাল বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করবো।
- ব্যালেন্স: গোল্ডে ট্রেড করার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনার ট্রেডিং ব্যালেন্স। যেহেতু GOLD ট্রেডিং এর জন্য অপেক্ষাকৃত বড় সময়ের প্রয়োজন, তাই লম্বা সময়ের জন্য এন্ট্রি পজিশন ধরে রাখতে হলে, অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সের পরিমাণও হতে হবে বড় আকারের, নতুবা আপনি চাইলেই দীর্ঘ সময়ের জন্য এন্ট্রি পজিশন ধরে রাখতে পারবেন না।
- সঠিক সময় নির্বাচন: গোল্ডের মুভমেন্টের উপর যেহেতু কোনও নির্দিষ্ট দেশের প্রভাব নেই, তাই এটিতে ট্রেড করারও নির্দিষ্ট কোনও সময় নেই। সপ্তাহের ৫দিন অর্থাৎ, সোম থেকে শুক্রবার ২৪ ঘন্টাই আপনি গোল্ড ট্রেডিং করতে পারেন। দিনের সকল সময়ই, গোল্ডের কম-বেশী মুভমেন্ট থাকলেও সাধারনত বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত গোল্ডের মুভমেন্ট তুলামুলক বেশী থাকে।
এছাড়াও, কোন সময় ট্রেড করার জন্য আদর্শ সে সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন Forex Basic ট্রেনিং কোর্সটি থেকে। ফ্রি রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে চাইলে কোর্সটিতে অংশ নিতে পারেন।
- টাইমফ্রেম নির্বাচন: গোল্ডে ট্রেড করার জন্য টাইমফ্রেমের নির্বাচন অনেকবেশী গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনি চাইলে যেকোনো টাইমফ্রেম নির্বাচন করেই ট্রেড করতে পারেন, তবে অবশ্যই আপনাকে অপেক্ষাকৃত ছোট টাইমফ্রেমগুলো বাদ দিতে হবে। কমপক্ষে H4 টাইমফ্রেম ব্যবহার করে ট্রেড করার পরামর্শ দিচ্ছি। টাইমফ্রেম বড় হলে, এনালাইসিসও অনেকবেশী শক্তিশালী হবে।
- লট সাইজ নির্ধারণ: সঠিক লট কিংবা ভলিউম নির্বাচন না করে যদি ট্রেড করেন তাহলে বুঝতেই পারবেন না, GOLD কিভাবে আপনার অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সকে শেষ করে দিচ্ছে। সঠিক লট সাইজ নির্ধারণ অনেক জটিল একটি বিষয়, সেটি নিয়ে অন্য কোনও আর্টিকেলে আলোচনা হবে। তবে এতটুকু মনে রাখবেন, প্রতি 200 ডলার বিনিয়োগ করলে আপনি সর্বাধিক 0.01 স্ট্যান্ডার্ড লটের এন্ট্রি নিতে পারবেন। যদি আপনার ব্যালেন্সের পরিমাণ ১০০০ ডলার হয়ে থাকে তাহলে আপনার সর্বাধিক লটের পরিমাণ হবে 0.05 স্ট্যান্ডার্ড লট।
লট কিংবা ভলিউম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য অনুগ্রহ করে Forex Lot এই আর্টিকেলটি দেখে নিতে পারেন। এখানে বিভিন্ন ধরনের লটের ক্যালকুলেশন সম্পর্কে বুঝতে পারবেন।
- স্টপলস অর্ডার: GOLD ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত স্টপলস অর্ডার ব্যবহার করিনা। কেননা, প্রায় দেখা যায়, গোল্ড স্টপলস লেভেল স্পর্শ করেই পুনরায় ট্রেন্ডের দিকে ফিরে আসে। এই জন্য আমরা সবসময়ই এন্ট্রি লসে থাকলে সেটি নির্দিষ্ট অ্যানালাইসিস হিসাব করে ম্যানুয়ালি ক্লোজ করতে পছন্দ করি। তবে আপনাদের জন্য পরামর্শ থাকবে, স্টপলস অর্ডার ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে প্রাইসের একটি নির্দিষ্ট জোনের হাই কিংবা লো লেভেল চিহ্নিত করে, তারপর স্টপলস সেট করবেন। যেমন ধরুন, দুইটি রেসিস্টেন্স লেভেল হচ্ছে, ১৭০০ এবং ১৬৭০ । গোল্ডের প্রাইস এখন হচ্ছে ধরুন, ১৬৫০ । সেই হিসাবে আপনার স্টপলসের লেভেল হবে ১৭০০ এর কাছাকাছি।
সবথেকে ভালো হয়, যদি একটি নির্দিষ্ট প্রাইস লেভেলের উপর ক্যান্ডেল ক্লোজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন। অনেক সময়ই এমন হয়, ক্যান্ডেল প্রথমে আপনার এন্ট্রির বিপরীতে গিয়ে স্টপলস লেভেল স্পর্শ করে, লসে আপনার এন্ট্রিটি ক্লোজ করে পুনরায় প্রফিটের দিকেই ফিরে আসে। এই জন্য গোল্ড ট্রেডিং এর জন্য ম্যানুয়ালি এন্ট্রি ক্লোজ করতে পারলে, সবথেকে ভালো।
- ডলার ইনডেক্স: গোল্ডের প্রাইস মুভমেন্টের একটি অন্যতম কারন হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি কিংবা হ্রাস পাওয়া। রিজার্ভ হিসাবে এবং ঝুঁকিমুক্ত এসেট হিসাবে ডলার এবং গোল্ড বিনিয়োগকারীদের কাছে অনেক বেশী পছন্দের। তাই সবসময়ই যেকোনো বৈশ্বিক খারাপ পরিস্থিতিতে গোল্ডের মান অনেক বেশী বৃদ্ধি পায়। ডলারের (USD) সাথে সাধারন নিয়মে, গোল্ডের বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান। সেই হিসাবে, যদি ডলারের ভ্যালু বৃদ্ধি পায় তাহলে গোল্ডের ভ্যালু কমে আসে। অন্যদিকে, ঠিক এর বিপরীত চিত্রও দেখা যায়। তাই, গোল্ড ট্রেডিং এর জন্য ডলারের উপর জ্ঞান থাকা আবশ্যিক।
এই বছরটি অন্যান্য বছরগুলোর মতন নয়। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিশ্ব অর্থনীতির খারাপ অবস্থা। এমতাবস্থায়, যারা গোল্ড ট্রেডিং করেন তাদের জন্য কিছু বিশেষ পরামর্শ দিচ্ছি। একটি বিষয় সর্বদাই মনে রাখবেন –
যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনীতির খারাপ অবস্থা, যুদ্ধ পরিস্থিতির কারনে সবথেকে বেশী প্রভাবিত হয়, গোল্ডের প্রাইস। তাই সাধারণ ট্রেডিং এসেটগুলোর ন্যায়, গোল্ড ট্রেডিং করা যাবেনা।
- ছোট টাইমফ্রেমের চার্ট বিশ্লেষণ করা থেকে বিরত থাকবেন। চার্ট অ্যানালাইসিস করার জন্য কমপক্ষে H4 টাইমফ্রেমের চার্ট ব্যবহার করবেন।
- ছোট সময়ে ট্রেডিং (স্ক্যাল্পিং) করা থেকে বিরত থাকবেন। এই সময়ে গোল্ডে ছোট সময়ে ট্রেড করা খুব ঝুঁকি-পূর্ণ হতে পারে।
- যতক্ষণ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনও সাপোর্ট-রেসিসটেন্স না পাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত কোনওরূপ এন্ট্রি গ্রহন করবেন না। যেমন ধরনের ট্রেন্ডলাইন কিংবা চ্যানেল চিহ্নিত করবেন এরপর বাউন্স কিংবা ব্রেকআউট কৌশল ব্যবহার করে এন্ট্রি গ্রহন করবেন।
- লটের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। বড় লট কিংবা ভলিউম ব্যবহার করে এন্ট্রি গ্রহন করা যাবেনা। প্রতি ২০০ ডলার ব্যালেন্সের জন্য সর্বাধিক 0.01 লটে এন্ট্রি গ্রহন করতে পারবেন। এর বেশী নয়।
- একাধিক এন্ট্রি গ্রহন করা যাবেনা এবং এন্ট্রি ক্লোজ করে তাৎক্ষণিক অন্য এন্ট্রি গ্রহন করা যাবে না। ধরুন, আপনার একটি Buy এন্ট্রি থেকে ৫০ ডলার প্রফিট নিলেন। আপনার মনে হচ্ছে, এখন একটি Sell এন্ট্রি নেয়া যেতে পারে। এরকম এন্ট্রি ক্লোজ করার পরই নতুন করে এন্ট্রি গ্রহন করা যাবেনা।
- এন্ট্রি গ্রহন করার জন্য প্রথমে ভালো করে ট্রেন্ড চিহ্নিত করার চেষ্টা করবেন। এরপর সাপোর্ট-রেসিসটেন্স খুঁজে বের করে, স্টপলস এবং প্রফিটের জায়গা নির্ধারণ করার মাধ্যমে এন্ট্রি পজিশন গ্রহন করবেন।
- নিয়মিত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিউজের দিকে লক্ষ্য রাখবেন। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো জোট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ, হামাস-হুতি বিদ্রোহ জনিত ইস্যু, ইরান এবং তুরস্কে প্রকাশিত যুদ্ধ এবং নিরাপত্তা জনিত যেকোনো খবরের উপর বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবেন। এই নিউজগুলো রিয়েল-টাইম আপডেট পেতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম যেমন Bloomberg, AP, Routers, BBC, CNBC এর সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল যেমন, ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার লাইক করে রাখতে পারেন। এতে করে তাৎক্ষণিক নিউজগুলো পেয়ে যাবেন।
- সপ্তাহের শেষ ট্রেডিং দিন (শুক্রবার) মার্কেট ক্লোজিং এর পূর্বে, সকল ধরনের এন্ট্রি পজিশন ক্লোজ করে দিবেন। কেননা এখন বৈশ্বিক অবস্থা ভালো নয়। যার ফলে যেকোনো সময়, যেকোনো কিছুই হতে পারে। এতে করে নতুন সপ্তাহ শুরুর দিন, বড় আকারের প্রাইস গ্যাপও দেখা যেতে পারে।
এতক্ষণ ধরে কেন, কি কারনে এবং কি কি বিষয় মেনে GOLD ট্রেড করবেন সেটির আলোচনা করেছি। আশা করছি বিষয়গুলো সহজেই আপনার জন্য উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। এখন কিছু দিক নির্দেশনা প্রদান করবো যেগুলো আমাদের নিজ ট্রেডিং অভিজ্ঞতার আলোকে উপস্থাপন করা হয়েছে।
- আপনি যদি গোল্ডে ট্রেড করতে চান, তাহলে শুধুমাত্র গোল্ডের ট্রেড করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন। একই ট্রেডিং অ্যাকাউন্টে গোল্ড এবং ভিন্ন কারেন্সি ট্রেড করবেন না।
- ভুলেও ছোটো সময়ের জন্য বিশেষ করে স্কাল্পিং ট্রেড করার জন্য গোল্ড নির্বাচন করবেন না। গোল্ডের মুভমেন্ট হয় বড় সময়ের জন্য। ছোট সময়ের জন্য ট্রেড করলে, লসের রেশিও বেশী হবে।
- সর্বাধিক ১ঃ২০০ লিভারেজ ব্যবহার করে গোল্ডে ট্রেড করবেন। এর থেকে বেশী লিভারেজ ব্যবহার করে ট্রেড করার চেষ্টা করবেন না।
- আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, কমপক্ষে ডেইলি টাইমফ্রেম অনুসরণ করে, মার্কেট এনালাইসিস করার চেষ্টা করবেন এবং ট্রেডে এন্ট্রি নিবেন H4 টাইমফ্রেমের চার্ট অনুসরণ করে। এর থেকে কম সময়ের টাইমফ্রেম ব্যবহার করবেন না।
- ১০০০ ডলারের নিচে অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স নিয়ে গোল্ড ট্রেড করবেন না। সেক্ষেত্রে প্রতি ২০০ ডলার ব্যালেন্সের জন্য আপনার লট সাইজ হবে 0.01. যদি ব্যালেন্সের পরিমাণ ১০০০ ডলার হয় তাহলে লট সাইজ হবে 0.05 (সর্বাধিক)
- প্রতি সপ্তাহের মার্কেট শুরু হবার দিন অর্থাৎ, সোমবার নিউইয়র্ক স্টক মার্কেট ওপেন হবার আগে অর্থাৎ, বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ০৬ঃ০০ পূর্বে GOLD নতুন করে কোনও এন্ট্রি গহন করা যাবেনা। প্রয়োজনে সারাদিন Netflix, YouTube দেখে সময় কাটাবেন। কিন্তু সন্ধ্যার আগে, এন্ট্রি গ্রহন করবেন না।
- প্রতি সপ্তাহের মার্কেট ক্লোজিং এর দিন অর্থাৎ, শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টার পর, গোল্ডে নতুন করে এন্ট্রি গ্রহন করবেন না। কেননা মার্কেট বন্ধ হয়ে গেলে পরের সপ্তাহে কি পরিমাণ প্রাইস গ্যাপে শুরু হবে সেটির কোনও নিশ্চয়তা নেই।
- সবসময় সাপোর্ট এবং রেসিস্টেন্স লেভেলগুলোতে এন্ট্রি গ্রহন করবেন। যদি প্রাইসের কোনও লেভেল খুঁজে না পান, তাহলে এন্ট্রি গ্রহন করবেন না। সহজ কথায়, প্রাইস যদি সাপোর্ট এবং রেসিস্টেন্স লেভেলের মধ্যবর্তী অবস্থানে থাকে তাহলে এন্ট্রি গ্রহন করা থেকে বিরত থাকুন।
- একটি এন্ট্রির জন্য (০.০১ লট এর হিসাবে) সর্বাধিক ২৫ ডলার পরিমাণ লস রাখতে পারবেন। এর উপরে হলে এন্ট্রি ক্লোজ করে ফেলবেন কিংবা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এন্ট্রি এডজাস্ট করে নিবেন। গোল্ড অনেক ট্রেন্ডি একটি এসেট। বেশীরভাগ সময়ই একটি নির্দিষ্ট ট্রেন্ড মেনে প্রাইস মুভমেন্ট করতে থাকে। সুতরাং, যদি গোল্ডের প্রাইস ট্রেন্ডকে ভালো করে চিহ্নিত করতে পারেন, তাহলে ভুল এন্ট্রির পরিমাণ কমে আসবে এবং সেই সাথে লসও।
- গোল্ডে এন্ট্রি গ্রহন করার জন্য, মার্কেট সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান, অ্যানালাইসিস করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এছাড়াও, আমাদের অ্যানালাইসিস সেবা রয়েছে যেখানে নিয়মিত গোল্ডের ট্রেডিং আপডেট ফ্রিতে জানতে পারবেন। এই জন্য চাইলে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হয়ে নিতে পারেন। লিংক – https://t.me/addlist/kHVxMkTp0rdhZDFl
এতক্ষন পর্যন্ত এই আর্টিকেলটিতে আমরা কিন্তু বিশেষ কোনও ট্রেডিং কৌশল নিয়ে আলোচনা করিনি। আমরা শুধুমাত্র বোঝানোর চেষ্টা করেছি, গোল্ডে ট্রেড করতে হলে আপনার কি কি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ট্রেডিং করার কৌশল, ট্রেডার হিসাবে আপনাকেই সেট করে নিতে হিবে। কেননা এক এক ট্রেডার, এক এক নিয়মে ট্রেড করে থাকেন।
GOLD অবশ্যই অনেকবেশী প্রফিটেবল একটি ট্রেডিং ইন্সট্রুমেন্ট। মুভমেন্টের পরিমাণ বেশী এবং দীর্ঘদিন নির্দিষ্ট ট্রেন্ডে অবস্থান করার কারনে ট্রেডারদের পছন্দের তালিকায় সবথেকে উপরে হচ্ছে এই, গোল্ড। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার সঠিক ট্রেন্ড চিহ্নিত করতে হবে। যদি ট্রেন্ড সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে না পারেন এবং ভুল এন্ট্রি নিয়ে বসেন, তাহলে দীর্ঘ সময় ধরে সেই লস আপনাকে ক্যারি করতে হবে।
আপনি যদি বিষয়গুলো খেয়াল করে, আমাদের উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে তারপর গোল্ডে ট্রেড করেন, তাহলে কথা দিচ্ছি, লসের থেকে আপনি দূরে অবস্থান করতে সক্ষম হবেন।
আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার প্রশ্ন কিংবা মতামত থাকলে, নিচের কমেন্ট সেকশনে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা চেষ্টা করবো সেটির, সঠিক নির্দেশনা প্রদান করার জন্য।